আজকের কাশিয়ানী

কাশিয়ানীতে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দে বিদ্যালয়ের বেহাল দশা!

আজকের কাশিয়ানী ডেস্ক:- সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেহাল দশা। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারাও পড়েছেন বিপাকে। স্কুল পরিচালনায় দেখা দিয়েছে নানাবিধ সমস্যা। সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্ব ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছানোর কারনে সভাপতি লাবু শেখ দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে আসছে না। সভাপতি অনুপস্থিতির কারণে স্কুল উন্নয়নে স্লিপ ও রুটিন মেইনটেনেন্স ও ওয়াসব্লকের বরাদ্দ খরচ করতে পারছেনা প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি ঐ স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবকদের একটি অংশ। গোপালগঞ্জ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা বারবার তদন্ত করেও অজানা কারনে সমস্যা গুলো সমাধান করতে পারছেনা।

এমনই ঘটনা ঘটে চলেছে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার রাতুল ইউনিয়নের চরভাটপাড়া গ্ৰামের ৩৯নং উত্তর চরভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এলাবাসীর ধারনা সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দের কারণে যে কোন সময় ঐ এলাকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে। উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদা আফরোজ ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯৫ সালে ৩৯নং উত্তর চরভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং বর্তমান সভাপতি মো. লাবু শেখ গত ২০ নভেম্বর ২০২১তারিখে নির্বাচিত সদস্যদের সমর্থনে সভাপতি নির্বাচিত হন। লাবু শেখ সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই বিভিন্ন হিসাব নিকাশ ও বিদ্যালয় পরিচালনায় প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির ক্ষমতা প্রয়োগ নিয়ে দ্বন্দ শুরু হয়।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, লাবু শেখ চরভাটপাড়া এলাকার প্রভাবশালী লাঠিয়াল বংশের মানুষ ও আয়কর বিভাগের আইনজীবী।তিনি গত ১২ অক্টোবর ২০২১তারিখে ৩৯নং উত্তর চরভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে বড় অংকের টাকা খরচ করে একটি প্যানেল পরিচালনা করেন এবং নিজেও অভিভাবক সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০ নভেম্বর ২০২১ তারিখে সকল নির্বাচিত সদস্যদের সমর্থন পেয়ে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন।

কমিটির সহ-সভাপতি হাফিজা খানম বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে করা একটি অভিযোগে শিক্ষা কর্মকর্তাগণ স্কুলে আসার পর প্রধান শিক্ষকের পক্ষে সত্য কথা বলায় সভাপতি লাবু শেখ তদন্ত চলাকালীন সময়ে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে কাপড় উঠিয়ে পেটানোর হুমকি দেয়। এবং বাজার থেকে আমার স্বামীর বড়ভাইকে মারপিট করেছে। তিনি প্রভাবশালী তাই আমরা প্রতিবাদ করতে পারিনি।

এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদা আফরোজ সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, লাবু শেখ স্কুলের সভাপতির নির্বাচিত হওয়ার পর পরই স্কুল উন্নয়নের বিভিন্ন বরাদ্দ স্লিপ, রুটিন মেইনটেনেন্সে ও ওয়াস ব্লকের অর্থ নিজের দলবল নিয়ে ভাগাভাগি করে খাওয়ার প্রস্তাব দেয়। আমি তার অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। পাশাপাশি আমাকে তার লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে এই স্কুল ছেড়ে চলে যেতেও হুমকি ধামকি দিচ্ছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির ৮ জন সদস্য সভাপতি লাবু শেখের বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেন এবং মিটিংয়ের মাধ্যমে রেজুলেশন করে অনাস্থা প্রকাশ করেছে। আমার জানামতে তিনি বর্তমানে অত্র বিদ্যালয়ের সভাপতি নেই।

সভাপতি লাবু শেখ জানান, প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদা আফরোজ ১৯৯৫ সাল থেকে একই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তিনি গাছ বিক্রয় সহ বিভিন্ন অনিয়ম করে চলছে। আমি সভাপতি হওয়ার পর স্কুলের ব্যাংক হিসাব দেখতে চাওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম থেকে বিরত থাকতে বললে তিনি কমিটির সদস্য মাহামুদ হোসেন ও আমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। এবিষয়ে আমরা উপজেলা ও জেলা শিক্ষাদপ্তরসহ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছি।

এসকল বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল হামিদ বলেন, ৩৯ নং উত্তর চরভাটপাড়া সঃ প্রঃ বিদ্যালয় বিষয়ক কয়েকটি অভিযোগ হয়েছে। প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির কার্যক্রমের বিষয়ে আমরা নজর রাখছি। ইতিমধ্যেই একটির তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেয়েছি। আর একটি তদন্ত শেষ হয়েছে, রিপোর্ট হাতে পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।