আজকের কাশিয়ানী

গোপালগঞ্জে ব্লাস্ট রোগে নষ্ট হচ্ছে ধান, দিশেহারা কৃষক

গোপালগঞ্জে ব্লাস্ট রোগে নষ্ট হচ্ছে ধান, দিশেহারা কৃষক

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিঃ- গোপালগঞ্জে বোরো ধানে দেখা দিয়েছে ব্লাস্ট রোগ। বিশেষ করে উফসি-২৮ জাতের ধানে রোগের প্রকোপ বেশি। ফলে জমিতেই নষ্ট হচ্ছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। রোগের প্রভাবে ধান চিটা হওয়ায় অর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা।

এদিকে, ধান নষ্ট হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। কি পরিমাণ ক্ষেতের ধান নষ্ট হয়েছে সে বিষয়ে কৃষক ও কৃষি বিভাগ কিছুই জানাতে পারেনি।

সোমবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা গেছে, এ মৌসুমে জেলায় উচ্চ ফলনশীল হাইব্রীড জাতের বোরো ধানের আবাদ করেছেন চাষিরা।  তবে চাল সরু ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় কৃষকরা হাইব্রীড জাতের পাশাপাশি উফসি-২৮ জাতের বোরো ধানেরও আবাদ করেছেন। কিন্তু ব্লাস্ট রোগ দেখা দেওয়ায় ধানের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। যেসব জমিতে উফসি-২৮ জাতের ধান রোপণ করা হয়েছে সেখানে ধানের শীষ আসার সঙ্গে সঙ্গে তা পুড়ে চিটা হয়ে যাচ্ছে। ইঁদুর গাছের গোড়া কেটে দেওয়ায় নষ্ট হচ্ছে ধান গাছ। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কয়েক হাজার কৃষক। ধান নষ্ট হওয়ায় সারা বছরের খাদ্যের যোগান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানাগেছে, এ বছর জেলায় প্রায় ৮১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ৫৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর, উফসি জাতের ২২ হাজার ২০০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়। এ বছর প্রায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৩০৭ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে জেলায়। তবে ধান নষ্ট হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

বোড়াশী গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মো. ফোরকান মোল্যা জানান, এ বছর আমি সোয়া তিন বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছি। এর মধ্যে হাইব্রিডের পাশাপাশি উফসি-২৮ জাতের ধান রোপণ করি। কিন্তু গাছে ব্লাস্ট রোগ হওযায় ধান চিটা হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে জমিতে ইঁদুর ধান গাছের গোড়া কেটে দেওয়ায় ধান নষ্ট হচ্ছে। ফলে আমি অর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি।

একই গ্রামের কৃষক রেজাউল করিম দাঁড়িয়া বলেন, যে সব জমিতে ২৮ জাতের বোরো ধান রোপণ করা হয়েছে যে সব ধানের গাছে শীষ আসার পর ধান শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এসব জমি থেকে এক ছাটাকও ধান ঘরে তোলা যাবে না। ধান গাছ রোগে আক্রান্ত হলেও কৃষি কর্মকর্তারা কোনো পরামর্শ দেয়নি। ফলে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মো. নূর আলম মোল্যা বলেন, বীজ খারাপ হওয়ায় ধান ফোলার পর রোগে আক্রান্ত হয়ে তা নষ্ট হয়ে চিটা হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগ পরামর্শ দিয়ে কোন উপকার করতে পারবে না। এখন সরকার যদি কোন সাহায্য সহযোগীতা না করে তাহলে আমাদের পথে বসতে হবে।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বর্ণি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মোহাব্বত আলী বলেন, চলতি বছর দুই বিঘা জমিতে বোরো-২৮ জাতের ধান রোপণ করেছি। ধানের শীষ আসার সঙ্গে সঙ্গে তা পুড়ে চিটা হয়ে গেছে। এবছর একটা ধানও ঘরে তুলতে পারবো না। সারা বছর কি খেয়ে বাঁচবো সেই চিন্তায় আছি।

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আ. কাদের সরদার বলেন, এ বছর জেলায় ৮১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। বেশিভাগ হাইব্রিড ধানের আবাদ হলেও উফসি জাতের ধান আবাদ করা হয়েছে। বোরো-২৮ জাতের ধান গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এ জাতের গাছ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যেসব জমিতে ব্লাস্ট রোগ হচ্ছে সেসব জমির ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। ব্লাস্ট রোগ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা কৃষকদের ছত্রাকনাশক ওষুধ স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ নিরুপন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরী করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। সেখান থেকে সরকারের উচ্চমহলে পাঠানো হবে। এরপর সরকার কোনো প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা করলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হবে।