Ajker Kashiani

নিয়ন্ত্রণহীন চাল, বেড়েছে আটা-চিনির দামও

নিয়ন্ত্রণহীন চাল, বেড়েছে আটা-চিনির দামও

বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারে ১.৩৫ শতাংশ বেড়ে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মসুর ডাল ১.৮৯ শতাংশ বেড়ে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চালের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন, এর মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে আটা ও চিনি।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি চিনিতে দাম ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। খোলা আটার দাম কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত একমাসের ব্যবধানে চাল, ময়দা, আটা, সয়াবিন তেল, ডাল, শুকনা মরিচ, চিনি, প্যাকেটজাত আয়োডিনযুক্ত লবণের দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত।

টিসিবির তথ্যমতে, গত এক মাসে খোলা আটার দাম বেড়েছে ২৪.৩৯ শতাংশ, আর প্যাকেটজাত আটার দাম বেড়েছে ১৭.৩৫ শতাংশ। খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৪.১৭ শতাংশ বেড়ে প্রতিলিটার বিক্রি হচ্ছে ১৬৮ থেকে ১৮২ টাকা।

বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারে ১.৩৫ শতাংশ বেড়ে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মসুর ডাল ১.৮৯ শতাংশ বেড়ে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে বাজারে দাম টিসিবির হিসাবের চেয়েও বেশি।

ঢাকার কারওয়ান বাজার, মগবাজার, হাতিরপুল, ইস্কাটন এলাকার কাঁচাবাজার ও মুদিদোকান ঘুরে দেখা গেছে ডিম আর পোল্ট্রি ছাড়া গত সপ্তাহেও দাম বেড়েছে প্রায় সব পণ্যে

কারওয়ান বাজারের ইয়াসিন জেনারেল স্টোরের বিক্রয়কর্মী আলী হোসেন বলেন, “এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি বস্তা চাল ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা বেড়েছে। মিনিকেট চালের বস্তা (৫০ কেজি) গত সপ্তাহে পাইকারি কিনেছি ৩২৫০ টাকা সেটা বেড়ে হয়েছে ৩৫০০ টাকা। বিআর-২৮ চালের দাম ২৫৫০ টাকা ছিল সেটা বেড়ে হয়েছে ২৮০০ টাকা।”

কারওয়ান বাজারে মেসার্স মতলব ট্রেডার্সের মালিক আবু রায়হান বলেন, “করপোরেট কোম্পানিগুলো চালের ব্যবসা করছে তাই চালের দাম নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। প্যাকেট চাল বাজারে ছেড়ে তারা তারা প্রতি কেজি চালে ১০ থেকে ৩০ টাকা ব্যাবসা করে।”

কম দামে পণ্য কিনতে রাজধানীর নাখালপাড়া থেকে কারওয়ান বাজারে এসেছেন মোহম্মদ রাসেল। তিনি বলেন, “এক বছর আগে প্রতি কেজি মসূর ডাল ৭০ টাকা ছিল, সেই মসুর ডাল এখন কিনেছি ১৩৫ টাকা দিয়ে। আমাদের আয় তো বাড়ে নি। এক বছর আগে ৪ জনের সংসারে খাবার খরচ ১০ হাজার টাকায় হতো, এখন লাগছে ১৫ হাজার।”

বেসরকারি এ চাকরিজীবী রাসেল বলেন, “২০১৩ সালে যখন ৩০ হাজার টাকা বেতন পেতাম তখন প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা জমাতে পারতাম। এখন ৫০ হাজার টাকা বেতন পেয়েও কোনো টাকা জমাতে পারছি না।”

গেল সপ্তাহে অধিকাংশ পণ্যের দাম বাড়লেও ব্যতিক্রম ডিম ও পোলট্রি। শুক্রবার বাজারভেদে ডিমের দাম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। ১০ দিনের ব্যবধানে দাম কমেছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫-১৮০ টাকা দরে। যদিও দুই সপ্তাহ আগে ২০০ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছিল ব্রয়লার মুরগি।

ভারত থেকে আমদানি বাড়ায় গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১০ টাকা কমেছে কাঁচা মরিচের দাম। কারওয়ান বাজারে প্রতিকেজি ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হলেও মগবাজারে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা যায়। এক মাস আগে কাঁচা মরিচের দাম ২০০ টাকা কেজি ছিল।

সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম কেজি প্রতি কমেছে ৫ থেকে ১০ টাকা। বাজারে বেশির ভাগ সবজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে।

খাতুনগঞ্জে পাইকারিতে ৭ টাকা বেড়েছে চিনির দাম

ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চিনির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে পাইকারি পর্যায়ে পণ্যটির দাম কেজিপ্রতি ৬-৭ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।

আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চিনি উৎপাদনকারী দেশগুলোতে খরার কারণে উৎপাদন কমে যাওয়া ও বিভিন্ন দেশ নিজস্ব পণ্য রফতানি সীমিত করায় বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত চিনির বুকিং দর বেড়েছে। এছাড়া ডলারের দাম বৃদ্ধি ও নিয়ত্রিত শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ বাড়িয়ে পূর্বের ন্যায় ৩০ শতাংশ করায় দেশিয় বাজারেও পণ্যটির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে, বর্তমানে পাইকারি পর্য়ায়ে প্রতিমণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চিনি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০ টাকা দামে। যা এক মাস আগে সর্বোচ্চ ২,৭০০-২,৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই হিসেবে, গত এক মাসের ব্যবধানে বাজারে চিনির দাম বেড়েছে মণে ২৫০-৩০০ টাকা। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম থাকায় পণ্যটির দাম আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

খাতুনগঞ্জের চিনি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স এ জামান এন্ড ব্রাদার্স এর স্বত্বাধিকারী নুরুল আলম বলেন, “বিশ্বের প্রধান চিনি উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশ ব্রাজিল। সম্প্রতি দেশটির উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গিয়েছে। যার কারণে রপ্তানিতে কিছুটা কড়াকড়ি আরোপ করেছে দেশটি। তাছাড়া বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটের কারণে বিকল্প উৎস থেকে জ্বালানি উৎপাদন প্রবণতায় পাম অয়েলের পাশাপাশি চিনির ওপরও প্রভাব পড়েছে।”

চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যমতে, গেল অর্থবছরে (২০২১-২২) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মাত্র ১৭ লাখ টন চিনি আমদানি হয়েছে।

এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে চিনি আমদানি হয়েছিল ২১ লাখ টন। এক বছরের ব্যবধানে ৪ লাখ টন চিনি কম আমদানি হওয়ায় সরবরাহ সংকটে পড়েছে দেশের প্রধান বেসরকারি রিফাইনারি মিলগুলো। পাশাপাশি দামও বেড়েছে।