আলফাডাঙ্গায় তালাকনামা জালিয়াতির মামলায় তদন্তে পিবিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক:- ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গাতে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতন ও ভূয়া তালাকনামা তৈরি করে স্ত্রী এবং তার পরিবারকে হয়রানি করায় তালাকনামা জালিয়াতির মামলা করা হয়েছে। এই মামলার তদন্ত করছে পিবিআই।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে উপজেলার বেজীডাঙ্গা গ্রামের দাউদ খানের ছেলে আজিম খানের সাথে একই গ্রামের মৃত জাহাঙ্গীর মোল্যার মেয়ে মনিরা বেগমের সাথে বিয়ে হয়।

তাঁদের ঘরে একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। কিন্তু বিয়ের পর থেকে স্বামী আজিম খান ও তার মা বাবা স্ত্রী মনিরা বেগমকে বিভিন্ন সময়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। যৌতুক দাবি করে ৫ লাখ টাকা। দিতে অস্বীকার করলে শুরু হয় নির্যাতন। এরই মধ্যে স্বামী আজিম খান বিদেশ যাওয়ার জন্য স্ত্রী মনিরা বেগমের বড় ভাই মো. ওহিদ মোল্যার থেকে ধার হিসেবে ৩ লাখ টাকা নিয়ে বিদেশ চলে যান। এরপরও বন্ধ হয়নি নির্যাতন।

শুরু হয় মনিরা বেগমের উপর যৌতুকের দাবিতে আজিমের বাবা মায়ের বেদম মারপিট ও নির্যাতন। যৌতুকের দাবি মেটাতে না পারায় ছেলে সন্তানসহ ছাড়তে বাধ্য হন স্বামীর সংসার।

পরে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মনিরা বেগম বাদী হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইং তারিখে যৌতুকের দাবিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে স্বামী আজিম খান, শ্বশুর দাউদ খান ও শ্বাশুড়ি হাওয়া বেগমের নামে কোর্টে মামলা করেন। এই মামলায় স্বামী আজিম খানের নামে ওয়ারেন্ট হয়।

পরবর্তীতে স্বামী আজিম খানের বাবা দাউদ খান সুকৌশলে ১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইং তারিখে মনিরা বেগমের স্বাক্ষর জাল করে একটি ভূয়া তালাকনামা তৈরি করেন এবং সেটা দেখিয়ে মনিরা ও তার পরিবারকে হয়রানি করতে থাকে।

বাধ্য হয়ে মনিরা ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে শ্বশুর দাউদ খান, শ্বাশুড়ি হাওয়া বেগম, নিকাহ্ রেজিস্ট্রার ও কাজী মো. শফিকুল ইসলামকে আসামী করে কোর্টে স্বাক্ষর জাল জালিয়াতির মামলা করেন।

গত শনিবার (২৬ মার্চ) জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্ত করেন পিবিআই এর কর্মকর্তা (এসআই) হেলাল।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই) হেলাল বলেন, আমরা মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। মামলার বিস্তারিত জানার জন্য উভয় পক্ষকে ডাকা হবে।

এদিকে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বামী আজিম খানের বাবা দাউদ খান স্ত্রী মনিরা বেগমের স্বাক্ষর নকল করে যে তালাকনামাটি তৈরি করেছিলেন। তার ভিত্তিতে ৯ মার্চ ২০২২ ইং তারিখে তিনি বাদী হয়ে মনিরা বেগম ও তার পরিবারকে হয়রানি করতে কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আদালতে দায়ের করা মামলার এজাহার ও ভূয়া তালাকনামার ঘটনার তারিখের মিল থাকলে অমিল রয়েছে ঘটনার সময় ও স্থানের।

তালাকনামার সত্যতা নিশ্চিত করতে নিকাহ্ রেজিস্ট্রার ও কাজী মো. শফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি নিজে ঘটনাস্থলে যাই নাই তবে সত্যতা যাচাই করতে একটা কাগজ দিয়েছি, এটা তালাকানামা না। মনিরা বেগম আমার সামনে কোন প্রকার স্বাক্ষর করে নাই।

এ বিষয়ে স্ত্রী মনিরা বেগমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি আমার স্বামী সন্তান ও সংসার চাই।

admin

Recent Posts

দিদার হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ কর্মী রাসেল গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক:- গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থেকে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায়…

5 days ago

মসজিদে যাওয়ার পথে রঙ মিস্ত্রিকে কুপিয়ে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক:- গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে নামাজ পড়তে যাওয়ার পথে আব্দুল কুদ্দুস শেখ (৬৫) নামে এক রঙ…

1 week ago

কাশিয়ানীতে বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল মামা-ভাগ্নের

নিজস্ব প্রতিবেদক:- গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে বাসের ধাক্কায় ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক যাত্রী মামা-ভাগ্নে নিহত হয়েছে। এসময় আহত…

1 week ago

কাশিয়ানীতে যুবদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক:- গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী…

3 weeks ago

কাশিয়ানীতে ছেলেকে সালিশে জরিমাণা, ক্ষোভে বাবার আত্মহত্যা

ডেস্ক রিপোর্ট:- বৈদ্যুতিক মটর চুরি করার দায়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে দুই যুবককে ৬০ হাজার টাকা জরিমাণা…

3 weeks ago

কাশিয়ানীতে সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্বে বাবার ভিটায় যেতে পারছেন না হুসনা

প্রতিনিধি কাশিয়ানী:- বাবার দেওয়া সম্পত্তি নিয়ে আপন দুই বোনের মধ্যে পাঁচ বছর ধরে চলছে বিরোধ।…

4 weeks ago