গোপালগঞ্জে টাকার বিনিময়ে মেডিকেল সার্টিফিকেট দেন আরএমও ফারুক

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি:- মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মেডিকেল সার্টিফিকেট (এমসি) বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে।

শুধু আরএমও একা নন, এই সার্টিফিকেট বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক অসিত কুমার মল্লিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। বাণিজ্যের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেন আরএমও ফারুক।  আরএমওর এই মেডিকেল সার্টিফিকেট  বাণিজ্যের শিকার খোদ ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত এক চিকিৎসক নিজেই। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক অসিত কুমার মল্লিক সার্টিফিকেট বাণিজ্যের বিষয়টি স্বীকার করলেও, স্বীকার করেনি আরএমও ফারুক।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, এসব ভুয়া সার্টিফিকেট ধর্ষণ, মারামারি, সংঘর্ষ, নির্যাতনসহ বিভিন্ন মামলায় ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে সঠিক বিচার পাচ্ছেন না তারা।

এ বিষয়ে কামাল হোসেন নামে এক ভুক্তভোগী হাসপাতালের সহকারী পরিচালক অসিত কুমার মল্লিক, আরএমও ফারুক আহমেদসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের অভিযোগ এনে  প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল থেকে দীর্ঘদিন যাবত ভুয়া চিকিৎসা সনদ নিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। প্রতি বছর শত শত ভুয়া চিকিৎসা সনদ দিয়ে কোর্টে মামলার জট তৈরি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ এতে হয়রানি হচ্ছে। উক্ত হাসপাতালের চিকিৎসক  ফারুক আহমেদ , শ্যামল চন্দ্র বাড়ৈ, হিটলার বিশ্বাস, অসিত কুমার মল্লিক, ওয়ার্ড বয় সোহেল শিকদার ও মিজান মোল্ল্যা ভুয়া চিকিৎসা সনদের সঙ্গে জড়িত। তারা হাসপাতালটিকে ব্যবসায়িক কেন্দ্রে রূপান্তর করেছে। টাকার বিনিময়ে ভুয়া চিকিৎসা সনদ সরবরাহ করছে। তিনি প্রত্যক্ষভাবে নিজেই এর ভুক্তভোগী।

অনুসন্ধানে গিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছর এই হাসপাতাল থেকে শত শত মেডিকেল সার্টিফিকেট বের হয়। এর মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ সার্টিফিকেট টাকার বিনিময়ে দেন আরএমও ফারুক আহমেদসহ একটি সিন্ডিকেট চক্র। গত তিন বছর ধরে তিনি এই হাসপাতালে সার্টিফিকেট বাণিজ্য করে আসছেন।  এসব সার্টিফিকেটের বেশিরভাগ মারামারি, সংঘর্ষ এবং ধর্ষণের মতো ঘটনা। টাকার বিনিময়ে আরএমও ফারুক সাধারণ আঘাতকে গুরুতর মারাত্মক আঘাত বানিয়ে ৩২৩ ধারার মেডিকেল সার্টিফিকেটের বদলে  ৩২৬ ধারায় সার্টিফিকেট দেন।

আবার গুরুতর মারাত্মক আঘাতকে সাধারণ আঘাত বানিয়ে ৩২৬ ধারার জায়গায় ৩২৩ ধারার মেডিকেল সার্টিফিকেট দেন। টাকা দিলে তার কাছে মেলে ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণের মতো ঘটনার মেডিকেল সার্টিফিকেটও। আর এই সার্টিফিকেট বাণিজ্যের একটি অর্থ যায় হাসপাতালের সহকারী পরিচালক অসিত কুমার মল্লিকের পকেটে। এ নিয়ে প্রতি বছরই আরএমওর বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করে আসছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। সার্টিফিকেট বাণিজ্যের বিষয়টি প্রথম থেকেই আমলে নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দ্রুত এই আরএমওকে প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, আমি নিজেই এমন ঘটনার শিকার। কিছু দিন আগে আমার এলাকায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় তেমন কেউ আহত বা জখম হয়নি। এ বিষয়ে আমি জানতে পারি আমাদের এক প্রতিপক্ষ টাকার বিনিময়ে আরএমও ফারুক আহমেদের কাছ থেকে ৩২৬ ধারার সার্টিফিকেট নিচ্ছে। পরে আমি আরএমও সাহেবের কাছে যাই। তিনি আমাকে কথা দেন তিনি এটা করবেন না। দুই দিন পরে শুনি চল্লিশ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি ৩২৬ ধারার সার্টিফিকেট দিয়েছেন। সেই সার্টিফিকেট দেখিয়ে আমার কাজিনকে হত্যাচেষ্টার মামলা দেয় তারা।

অভিযোগ দেওয়া ভুক্তভোগী কামাল হোসেন বলেন, আরএমও আমার প্রতিপক্ষের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে ৩২৩ ধারার মেডিকেল সার্টিফিকেট ৩২৬ বানিয়ে দিয়েছেন। পরে আমি বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমরা ওই আরএমওকে হাসপাতাল থেকে দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানাই।

এ বিষয়ে আরেক ভুক্তভোগী রবিউল ইসলাম বলেন, আমার চাচাতো ভাই তার ছেলের মাথার চামড়া ব্লেড দিয়ে কেটে হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে হাসপাতালের আরএমও ফারুক আহমেদকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ৩২৬ ধারার মেডিকেল সার্টিফিকেট দেন। পরে সেই মামলায় আমাকে জেলে যেতে হয়।

এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক অসিত কুমার মল্লিক সার্টিফিকেট বাণিজ্যের কথা স্বীকার করে  বলেন, আমাদের একা জড়াবেন কেন। এটার সঙ্গে তো স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীরা জড়িত। আমি কিছু বলতে গেলে স্থানীয়রা বলে আমার কথা হাসপাতালের একজন পিয়নও মানে না। আমি আরএমওকে প্রত্যাহারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

এ বিষয়ে আরএমও ফারুক আহমেদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, চাকরি করতে গেলে অনেক সময় স্থানীয় অনেকের অনুরোধ রাখতে হয়। আমি তাদের অনুরোধ রাখি। কিন্তু টাকার বিনিময়ে এ সার্টিফিকেট বাণিজ্য করি না।

এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য রবিউল ইসলাম বলেন, এ ধরণের সার্টিফিকেট বাণিজ্যের কারণে সুষ্ঠু বিচার থেকে বঞ্চিত হন অনেক সাধারণ মানুষ। কারণ ধর্ষণ, মারামারি, সংঘর্ষ, নির্যাতনসহ কয়েকটি মামলার বিচার মেডিকেল সার্টিফিকেটের ওপর নির্ভর করে।

admin

Recent Posts

মসজিদে যাওয়ার পথে রঙ মিস্ত্রিকে কুপিয়ে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক:- গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে নামাজ পড়তে যাওয়ার পথে আব্দুল কুদ্দুস শেখ (৬৫) নামে এক রঙ…

3 days ago

কাশিয়ানীতে বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল মামা-ভাগ্নের

নিজস্ব প্রতিবেদক:- গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে বাসের ধাক্কায় ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক যাত্রী মামা-ভাগ্নে নিহত হয়েছে। এসময় আহত…

4 days ago

কাশিয়ানীতে যুবদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক:- গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী…

2 weeks ago

কাশিয়ানীতে ছেলেকে সালিশে জরিমাণা, ক্ষোভে বাবার আত্মহত্যা

ডেস্ক রিপোর্ট:- বৈদ্যুতিক মটর চুরি করার দায়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে দুই যুবককে ৬০ হাজার টাকা জরিমাণা…

3 weeks ago

কাশিয়ানীতে সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্বে বাবার ভিটায় যেতে পারছেন না হুসনা

প্রতিনিধি কাশিয়ানী:- বাবার দেওয়া সম্পত্তি নিয়ে আপন দুই বোনের মধ্যে পাঁচ বছর ধরে চলছে বিরোধ।…

3 weeks ago

আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত

রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ:- ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত কমিটির পরিচিতি সভা ও অভিষেক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলফাডাঙ্গা…

3 weeks ago