নোটিস:
কাশিয়ানীর জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ মিডিয়ার আপনাকে স্বাগতম।  
কাল থেকে ওড়াকান্দির স্নানোৎসব ও মেলা শুরু 

কাল থেকে ওড়াকান্দির স্নানোৎসব ও মেলা শুরু 

নিজস্ব প্রতিবেদক:- গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার শ্রীধাম ওড়াকান্দির  স্নানোৎসব ও ৫ দিনব্যাপী মহাবারুনী মেলা আগামীকাল শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে। 

শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ২শ’ ১৩তম জম্ম তীথি উপলক্ষে স্নানোৎসবে ও বারুনীর মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এটি জেলার ১৭৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী স্নানোৎসব ও বারুনীর মেলা। প্রতি বছরের ন্যায়  এ বছরও এ অনুষ্ঠানে লাখ লাখ পূণ্যার্থীর সমাগম ঘটবে।

স্নানোৎসবের দিনে র‌্যাবের একটি টিম, পুলিশ সদস্যসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যাবস্থা গ্রহণ করবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

শনিবার (৬ এপ্রিল) ভোর ৫টা ২৮ মিনিটে  শ্রীধাম ওরাকান্দির গদিনসীন ঠাকুর ও মেলা উদযাপন পরিষদের সভাপতির নেতৃত্বে ঠাকুর পরিবারের সদস্যরা প্রথমে বারুনী সাগরে ও পরে কামনা সাগরে স্নান করে এ স্নানোৎসবের শুভ সূচনা করবেন। ধর্মীয় প্রর্থায় ওড়াকান্দির হরি মন্দির ও গুরু চাঁদ মন্দিরে পুরোহিতরা পূজা-অর্চনা শুরু করবেন। তারপর বিরামহীনভাবে শনিবার রাত পর্যন্ত চলতে থাকবে পূন্যার্থীদের স্নানের পালা। হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্ম তিথির শুভ মুহুর্তে এ স্নান শুরু হয় আর চলে তিথি শেষ না হওয়া পর্যন্ত।

ওড়াকান্দির এ মিলন মেলায় লাখ লাখ মতুয়া ভক্তদের উৎসবে প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। কাশিয়ানী উপজেলার পূণ্য ভূমি শ্রীধান ওড়াকান্দি পূর্ণব্রহ্ম হরিচাঁদ ঠাকুরের লীলাক্ষেত্র ও মতুয়া সম্প্রদায়ের মহা তীর্থ হিসেবে সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এক পবিত্র স্থান হিসেবে পরিচিত।

বিগত দিনগুলোতে এ ঐতিহ্যবাহী জন্মোৎসব ও মেলায় রাষ্ট্র প্রধান, বিরোধীদলীয় নেতা , মন্ত্রী, এম.পি, বিভিন্ন ধর্মীয় নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়েছে। এ তীর্থ স্থানটি এখন সকলের কাছে অতি পরিচিত। বিগত ২০২০ সালের ২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শ্রীধাম ওড়াকান্দি সফর করেন।

দু’শ ১২ বছরের ঐতিহ্যকে ধারণ করে শ্রীধাম ওড়াকান্দি এখন মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে প্রাণাধিক। ঠাকুরের জন্ম ও মৃত্যু তিথিতে মহাবারুণীর দিনে ওড়াকান্দি শ্রীধামে ঐতিহ্যবাহী বিশাল জন্মোৎসব এবং মেলা বসে। মতুয়া ভক্তরা তাদের পূণ্য লাভের আশায় লাখ লাখ লোকে এ স্নানোৎসবে অংশ নেয়। পূণ্যার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে এটি। পরিণত হয় মহামিলন মেলায়।

শনিবার উৎসব মুখর ও ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে হরিচাঁদ ঠাকুরের ২১২ তম বারুনীর স্নান ও মহাযোগ উৎসব।

নিপীড়িত ও অবহেলিত মানুষের মুক্তির দূত হিসেবে আধ্যাত্মিক পুরুষ পূর্ণব্রহ্ম হরিচাঁদ ঠাকুর বাংলা ১২১৮ সালের ফাল্গুন মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথীর ব্রহ্ম মুহুর্তে মহা বারুনীর দিনে কাশিয়ানী উপজেলার সাফলীডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাত্র ৬৬ বছর বয়সেই ১২৮৪ সালে জন্মের একই দিনে তীরোধনে যান। এ পরম পুরুষ হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মের জন্য সাফলীডাঙ্গা গ্রাম হয়ে ওঠে ধন্য। এর পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী গ্রাম ওড়াকান্দি হরিচাঁদ ঠাকুরের অলৌকিকত্ব ও লীলার জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠে।

হরিচাঁদ ঠাকুরের বাল্য নাম হরি হলেও তাঁর একান্ত ভক্তরা হরিচাঁদ নামে ডাকতেন। পিতা যশোবন্ত ঠাকুরের পাঁচ পুত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় পুত্র ।

লাখ লাখ মতুয়া ভক্তরা স্নান করে তারা তাদের মানতের পণ্য সামগ্রী, ধানের ছড়া, কিংবা টাকা-পয়সা মন্দিরে দিয়ে প্রণাম করে স্ব স্ব বাড়ীতে চলে যায়। অনেকে আবার এ উপলক্ষে আয়োজিত ৩ দিনের মেলায় অংশগ্রহণ করতে থেকে যান।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাসহ দূর দূরান্তের কমপক্ষে ২ ডজন জেলা বরিশাল, ভোলা,ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালি, বরগুনা, যশোর, নড়াইল, কুমিল্লা, চাঁদপুর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা,  ফরিদপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, ঝিনাইদহ, মাগুরা প্রভৃতি জেলা এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ নানা প্রান্ত থেকে পায়ে হেটে, বাসে চড়ে, ট্রলারসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে ঢাক-ঢোল বাজাতে বাজাতে লাল নিশান উড়িয়ে আবাল-বৃদ্ধ বনিতা সকলেই হরিবোল হরিবোল ধ্বনিতে আকাশ প্রকম্পিত করে মিছিল সহকারে মতুয়া ভক্তরা ওড়াকান্দির হরি মন্দিরের সামনে হাজির হন।

ওড়াকান্দির স্নানোৎসবকে ঘিরে ৫ দিনের বারুনীর এ মেলায় ধর্মীয় আবহ যেমন তেমনি রয়েছে লোকজ ঐতিহ্য। গোপালগঞ্জের এ মেলা  গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে এলাকার সবশ্রেণির মানুষের সর্বজনীন এ মেলা। মেলায় লোকজ ঐতিহ্য বেত, বাঁশ, ব্রোঞ্জ, মৃৎ, কুটির শিল্পজাতসহ নানা দ্রব্য সামগ্রীর সমাবেশ ঘটে।

স্নানোৎসবে ভক্তদের স্নানের জন্য কামনা সাগর ও শান্তি সাগর নামে দুটি পুকুর রয়েছে। শ্রীধাম ওড়াকান্দিতে ছোটবড় ৫ টি মন্দির রয়েছে। এর মধ্যে  হরিচাঁদ মন্দির ও গুরু চাঁদ মন্দির প্রধান। অপর ৩ টি হচ্ছে চন্ডি মন্দির।

হরিচাঁদ ঠাকুরের ৬ষ্ঠ পুরুষ ও কাশিয়ানী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর হিল্টু বলেন, এ স্নানোৎসবে অন্তত ১০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে। স্নানোৎসব সফল করতে আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হযেছে। সুব্রত ঠাকুর আরো জানান, প্রায় পৌনে ২শ’ বছর আগে ওড়াকান্দিতে স্নানোৎসব ও বারুনীমেলার প্রচলন হয়। তারপর থেকে এ উৎসব চলে আসছে।

কাশিয়ানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, স্নানোৎসবে পুলিশ সদস্যসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছে।


@copy; All rights reserved © 2021।। Ajker Kashiani