Ajker Kashiani

কাশিয়ানীতে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

প্রতিনিধি কাশিয়ানী:- গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রায় ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার হাতিয়াড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দেবদুলাল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে তার ইউনিয়নের জনগণ বিভিন্ন প্রকল্পের ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা আত্মসাতের ফিরিস্তি তুলে ধরে গেল বছরের ২৯ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি অভিযোগ করেছেন। একই অভিযোগে আরো প্রায় দেড়কোটি টাকার জমি কেনার অভিযোগ করা হয়েছে। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারী কমিশন আবেদনটি গ্রহণ করেন।

গত বুধবার (২২সেপ্টেম্বর) দুর্নীতি দমন কমিশনের দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেলের পরিচালক উত্তম কুমার মন্ডল স্বাক্ষরিত একটি পত্রে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহপূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণের নির্দেশ দেন।

নির্দেশে বলা হয়েছে, প্রাপ্ত অভিযোগটির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহপূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাজেকা, ফরিদপুর বরাবর প্রেরণের জন্য কমিশন কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্ত অনুসারে তথ্য সংগ্রহপূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে বলা হলো।

এলাকাবাসীর অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে হাতিয়াড়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড পাথরগ্রাম পূর্বপাড়া হতে পশ্চিমপাড়া পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার মাটির রাস্তা নির্মাণের জন্য ৩৪ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়। সেখানে মাত্র সাড়ে ৭শ মিটার রাস্তা নির্মাণ করে ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। একই অর্থ বছরে কাবিখা- কাবিটা প্রকল্পের কোন কাজ না করে ৩ লাখ টাকা, স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিশেষ বরাদ্দের ৫ লাখ টাকার কোন কাজ না করে আত্মসাৎ করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদের ১% টাকা দিয়ে কোন প্রকল্প বা কাজ না করে ১৫ লাখ টাকা, বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগীদের কাছ থেকে ৫ হাজার করে অন্তত ৮লাখ টাকা, ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে রাহুথড় হাট-বাজার উন্নয়নমূলক কাজের বরাদ্দকৃত ১৫লাখ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের এলজিএসপি প্রকল্পের ৩০ লাখ টাকা, নলকূপ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৫হাজার করে ১০ লাখ টাকা, হাতিয়াড়া ইউনিয়নের ভূমিহীনদের সরকারি ঘর পাইয়ে দেয়ার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ২০হাজার করে মোট ২০ লাখ টাকা, ২০২০-২১ অর্থ বছরে এলজিএসপি প্রকল্পের কোন উন্নয়নমূলক কাজ না করে ১১লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া রাহুথর অমৃতময়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ফুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৈশ প্রহরী কাম দপ্তরী নিয়োগ দিয়ে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

অভিযোগে আরো জানানো হয়েছে, দেবদুলাল বিশ্বাস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে কাশিয়ানী উপজেলার পুইশুর, হাতিয়াড়া, নারান্দীয়া, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাতপাড়া ও মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলায় শ্বশুরবাড়ি এলাকায় নিজ নামে ও স্ত্রী এবং শ্বশুরবাড়ীর আত্মীয় স্বজনের নামে অন্তত ৩০ একর জমি কিনেছেন। যার বাজার মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা।

এছাড়া চেয়ারম্যান তার স্ত্রী নন্দিতা বিশ্বাসের নামে তার বাবার বাড়ির ঠিকানায় টেকেরহাট, রাজৈর উপজেলার জনতা, অগ্রণী, সোনালী ও রুপালী ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাবে অন্তত ৫০লাখ এবং শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, শ্যালক ও শ্যালকের স্ত্রীর নামে আরো অন্তত ৫০ লাখ টাকা জমা রেখেছেন। এসব অভিযোগ সরেজমিন তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

হাতিয়ারা ইউনিয়ন পরিষদের ০৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য সন্তোষ কুমার মন্ডল বলেন, ‘নির্বাচিত হওয়ার পর চেয়াম্যানের কিছু ভাবাপন্ন মেম্বার নিয়ে পরিষদের কাজকর্ম করেছে। চেয়ারম্যান স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে পরিষদ পরিচালনা করেন। তার পছন্দের সদস্যদের দিয়ে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ কোনমতে করিয়ে বিল ভাগাভাগি করেন। প্রতিবাদ করায় আমার ওয়ার্ডে কোন কাজ দেয় না। তার বিরুদ্ধে যে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তার সুষ্ঠ তদন্ত হলে সত্যতা পাওয়া যাবে। আমি এখন কিছু বলবো না। তদন্ত আসলে তখন সব কিছু বলবো।

সংরক্ষীত ওয়ার্ডের নারী সদস্য চন্দ্রা সিকদার ও সমীর বর বলেন,এই মূহুর্তে আমাদের কিছু বলার নেই। সময়তো শেষ। বলেই বা কি হবে। ভালো মন্দ দুটোই আছে।

এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান দেবদুলাল বিশ্বাস বলেন, আগামীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এলাকার জনগনের কাছে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে বেনামে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দায়ের করেছে একটি প্রতিপক্ষ মহল। আমার জানামতে এটা আমার বিরুদ্ধে ১২তম অভিযোগ দায়ের। একই অভিযোগ আগে ১১বার দিয়েছে। এর একটা অভিযোগও সত্য নয়। তবে আমার একটা দাবি যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো করছেন তারা বেনামে না করে নাম দিয়ে অভিযোগ দায়ের করুন। সঠিক তদন্ত হলে জনগনই এর উত্তর দিবে এবং প্রমাণ করবে আমি কোন অন্যায় কাজ করিনি।’

কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রথীন্দ্রনাথ রায় বলেন, ইউনিয়নে সরকারি যে বরাদ্দ হয়, সেগুলো যথাযথ তদারকির মাধ্যমে হয়ে থাকে। এখানে বড় ধরণের কোন অনিয়ম করার সুযোগ নেই। আমার ১৩ মাসের দায়িত্বকালে এ ধরনের কোন অনিয়ম চোখে পড়েনি বা কেউ অভিযোগও করেনি।