আজকের কাশিয়ানী ডেস্ক:- গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় যৌতুকের টাকা না পেয়ে কলি নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকদের বিরুদ্ধে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ১৮ নভেম্বর দুপুরে ওই গৃহবধূ মারা যান।
২০০৯ সালে বিবাহ হয় কলির। ৮ থেকে ৯ মাস সুখে-শান্তিতেই তাদের সংসার চলছিল। এরপর থেকে কলির ওপর চলতে থাকে শ্বশুরবাড়ির লোকদের নির্যাতন। এর একটাই কারণ যৌতুক। এ কারণে স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকদের সঙ্গে তার ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকত।
গত ৫ নভেম্বর যৌতুককে কেন্দ্র করে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকদের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন কলি বেগম। তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় তার স্বামী মিরাজ মুন্সী। পরে কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় কলিকে। এবিষয়ে ৯ নভেম্বর কাশিয়ানী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন কলি বেগম।
নিহত কলি বেগম গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার রাজপাট ইউনিয়নের বড় বাহিরবাগ গ্রামের সিরাজুল ইসলামের মেয়ে। ১৩ বছর আগে কাশিয়ানী সদর ইউনিয়নের পিংগলিয়া গ্রামের সলেমান মুন্সির ছেলে ফার্নিচার ব্যবসায়ী মিরাজ মুন্সির সঙ্গে কলির বিয়ে হয়। বিয়ের সময় মিরাজ মুন্সিকে যৌতুক হিসেবে নগদ ৬০ হাজার টাকা ও স্বর্ণালংকার দেয়া হয়। তাদের ১০ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
নিহত কলির বাবা সিরাজুল ইসলাম জানান, বিয়ের পর থেকেই মিরাজ মুন্সি বিভিন্ন সময় আমার মেয়ে কলির কাছে যৌতুক দাবি করে ও টাকা আনার জন্য চাপ দিতে থাকে। গত ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় মিরাজ মুন্সি পুনরায় টাকা এনে দেয়ার জন্য চাপ দিলে কলি রাজি না হওয়ায় তাকে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে। পরে কলি রাত ১টার দিকে আমার বড়ো মেয়েকে ফোন করে বলে আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমাকে মেরে ফেলবে তোরা আমাকে এসে নিয়ে যা। ফোন পেয়ে আমার বড়ো মেয়ে ও দুই ছেলে খুব ভোরে পিংগলিয়ায় কলির শ্বশুরবাড়িতে যায়। সেখানে গিয়ে কলিকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। পরে বাড়ির পেছনে বাঁশ বাগানে গুরুতর আহত অবস্থায় নিচু একটি বাঁশের সাথে কলিকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। অবস্থার অবনতি দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক কলিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ নভেম্বর শুক্রবার দুপুরে সে মারা যায়।
তিনি আরও বলেন, আমি যৌতুকের টাকা দিতে পারিনি বলে তারা আমার মেয়েকে মারধোর করে গলায় দড়ি দিয়ে বাঁশের সাথে ঝুলিয়ে রাখে। ওইদিন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার মেয়ে মারা যায়। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
কাশিয়ানী থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মুহাম্মদ ফিরোজ আলম জানান, অভিযোগ ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রাপ্তি সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।