গোপালগঞ্জে সমঝোতা হওয়ার পরও মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে না নেয়া শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়েছে বহিরাগতরা। এতে কমপক্ষে আট শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের গাড়ি, একটি লোকাল বাস ও একটি ট্রাক ভাংচুর করা হয়। বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে হামলা করা হয়।
এদিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ প্রায় ১১ ঘণ্টা পরে তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকে ঢাকা-খুলনা ও গোপালগঞ্জ-পিরোজপুর মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে গোপালগঞ্জ শহরের নবীনবাগ এলাকার হেলিপ্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) এক ছাত্রী তার বন্ধুকে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় ৭/৮ জন যুবক ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে তাদের তুলে নিয়ে হেলিপ্যাডের পাশে নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দায় নিয়ে যায়। পরে সঙ্গে থাকা বন্ধুকে মারধর এবং ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে। খবর পেয়ে অন্য শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ধার করে। ওই ছাত্রী প্রথমে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান গোপালগঞ্জ সদর থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ এবং দোষীদের শাস্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।
দুপুর আড়াই দিকে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা, ভিসি একিউ এম মাহাবুব, জেলা আওয়ামীলীগের লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকে বসেন। বিকেল ৪টায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের। বৈঠক শেষে জেলা প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করে।
শিক্ষার্থীদের একাংশ ক্যাম্পাসে ফিরে গেলেও অন্যরা মহাসড়কের উপর অবস্থানে থাকে। এ সময় বহিরাহতরা লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের উপর হামলা চালালে তারা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। এ সময় আট শিক্ষার্থী আহত হয়।
হামলায় গুরুতর আহত ছয়জনকে গোপালগঞ্জ ২৫০-শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ও একজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ হামলায় ছাত্রলীগকে দায়ী করলেও এ ঘটনার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্ট নেই দাবি করে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. নিউটন মোল্লা জানান, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জেলা ছাত্রলীগ একাত্মতা প্রকাশ করে পাঁচ ঘণ্টা আন্দোলন করেছে। প্রশাসনের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে সমঝোতা করিয়ে দিয়েছে। এরপর আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাসে ফিরে যায়।
তিনি বলেন, ‘তবে আমি শুনেছি, এরপর কিছু সংখ্যক জামায়াত, ডান-বাম নেতাকর্মীরা আন্দোলন থেকে সরে না আসায় তাদের স্থানীয়রা সরিয়ে দিয়েছে।’
গোপালগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শীতল চন্দ্র পাল জানান, ধর্ষণের ঘটনায় সন্দেহভাজন তিনজনকে আটক করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি একিউএম মাহাবুব বলেন, ‘এটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। জড়িতদের উপযুক্ত বিচার করতে হবে, যাতে ধর্ষণের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।’
পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘অপরাধী যেই হোক না কেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আমিও চাই, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ সাজা হোক।’
জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলাতানা বলেন, ‘আমি বিষয়টি নিয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখছিলাম। পুলিশ সুপারকে অনুরোধ করেছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবেন।’